জীবের মূল লক্ষ্য কি?
উত্তর: আত্মার মুক্তি।
আত্মার মুক্তি কেনো?
কারন প্রতিটা জীবের মধ্যে আত্মা বিরাজমান। যখন জীবের জন্ম হয়, তখন আত্মা সেই জীবের দেহ ধারণ করে। জীব শৈশব থেকে যৌবন পেরিয়ে বৃদ্ধ হয়ে একসময় মারা যায়। আত্মা তখন সেই দেহ ত্যাগ করে কিছুদিনের জন্য তার কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ কিংবা নরকে বাস করে। তারপর তার পুরোনো জন্মের কর্মফল অনুযায়ী অন্য কোনো যোনীতে (পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, জীবজন্তু কিংবা মনুষ্য হয়ে) পুনরায় জন্মগ্রহন করে এবং নতুন দেহ ধারন করে ! জন্ম , মৃত্যুের এই চক্র এভাবে চিরকাল চলতে থাকে। কারন দেহ ক্ষণস্থায়ী কিন্তু আত্মা চিরস্থায়ী।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে,
“ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্ / নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ। অজো নিত্যঃ শাশ্বতোঽয়ং পুরাণো / ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে ॥” (গীতা ২.২০)
অর্থাৎ আত্মার কখনো জন্ম হয়না বা মৃত্যু হয় না। অথবা পুনঃ পুনঃ তার উত্পত্তি বা বৃদ্ধি হয় না, তিনি জন্ম রহিত শাশ্বত, নিত্য এবং নবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনো বিনষ্ট হয় না।
মুক্তির উপায়?
জন্ম মৃত্যুর এই চক্রবুহ্য থেকে বেরোনোর একমাত্র উপায় হলো মোক্ষ লাভ করা। মোক্ষ হলো সেই অবস্থা , যে অবস্থায় আত্মার আর পুনর্জন্ম হয় না। আত্মা তখন পরমব্রক্ষ্ম এ মিলিত হয়ে বিলীন হয়ে যায়!
মোক্ষলাভের পথ?
মোক্ষলাভের পথ হচ্ছে ৩ টি। ১) জ্ঞানযোগ, ২) ভক্তিযোগ এবং ৩) কর্মযোগ।
জ্ঞানযোগ: যারা দার্শনিক প্রকৃতির মানুষ , যারা জ্ঞান আহরনে সাবলীল, যারা শাস্র অধ্যয়নে পটু, তাদের জন্য জ্ঞান মার্গ টা স্বাভাবিক - তাদের পথ হলো জ্ঞানযোগ !
ভক্তিযোগ: আর যাদের মধ্যে ভক্তিভাব বেশী, যারা ভগবানকে সখা ভাবতে ভালবাসেন , তারা বেছে নেন ভক্তিযোগ। “অকপটভবে ঈশ্বরানুসন্ধানই ভক্তিযোগ; প্রীতি ইহার আদি, মধ্য ও অন্ত। " (স্বামী বিবেকানন্দ, ভক্তিযোগ ১.১)
কর্মযোগ: অন্যদিকে, “কর্ম-রহস্য অবগত হওয়াই কর্মযোগ।… কর্মযোগ কি বলে?-বলে, ‘নিরন্তর কর্ম কর, কিন্তু কর্মে আসক্তি ত্যাগ কর।’ কোন কিছুর সহিত নিজেকে জড়াইও না। মনকে মুক্ত রাখো।” (স্বামী বিবেকানন্দ, কর্মযোগ ৭.১০)
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে,
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন । মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোঽস্ত্বকর্মণি ॥ (গীতা ২.৪৭)
অর্থাৎ স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নাই। কখনো নিজেকে কর্ম ফলের হেতু মনে করো না এবং কখনো স্বধর্মেও আচরন থেকে বিরত হয়ো না।
মোক্ষলাভের এই ৩ পথের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই
তবে মোক্ষলাভের এই ৩ পথের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। একই সঙ্গে একাধিক পথে চলতে কোনো বাঁধা নেই। শুধু যে পথে বেশী চলা হয়, সেই অনুযায়ী নামকরণ। “কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ-সকল যোগই মুক্তিলাভের সাক্ষাৎ ও অন্যনিরপেক্ষ উপায়। ‘সাংখ্যযোগৌ পৃথগ্বালাঃ প্রবদন্তি ন পন্ডিতাঃ’ (গীতা ৫.৪)-অজ্ঞেরাই কর্ম ও জ্ঞানকে পৃথক্ বলিয়া থাকে, পন্ডিতেরা নয়।” (স্বামী বিবেকানন্দ, কর্মযোগ ৬.২৫)