কর্মযোগ কি
অতএব কর্মযোগ নিঃস্বার্থপরতা ও সৎকর্ম দ্বারা মুক্তি লাভ করিবার একটি ধর্ম ও নীতিপ্রনালী। কর্মযোগীর কোন প্রকার ধর্মমতে বিশ্বাস করিবার আবশ্যকতা নাই। তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করিতে পারেন, আত্মা-সম্বন্ধে অনুসন্ধান না করিতে পারেন, অথবা কোন প্রকার দার্শনিক বিচারও না করিতে পারেন, কিছুই আসে যায় না। তাঁহার বিশেষ উদ্দেশ্য নিঃস্বার্থপরতা লাভ করা এবং তাঁহাকে নিজ চেষ্টাতেই উহা লাভ করিতে হইবে। তাঁহার জীবনের প্রতি মুহূর্তই হইবে উহার উপলব্ধি, কারণ জ্ঞানী যুক্তিবিচার করিয়া বা ভক্ত ভক্তির দ্বারা যে সমস্যা সমাধান করিতেছেন, তাঁহাকে কোনপ্রকার মতবাদের সহায়তা না লইয়া কেবল কর্মদ্বারা সেই সমস্যারই সমাধান করিতে হইবে। (স্বামী বিবেকানন্দ, কর্মযোগ ৭ম অধ্যায়)
“কর্ম-রহস্য অবগত হওয়াই কর্মযোগ।… কর্মযোগ কি বলে?-বলে, ‘নিরন্তর কর্ম কর, কিন্তু কর্মে আসক্তি ত্যাগ কর।’ কোন কিছুর সহিত নিজেকে জড়াইও না। মনকে মুক্ত রাখো।” (স্বামী বিবেকানন্দ, কর্মযোগ ৭.১০)
গীতা কি বলে
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন । মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোঽস্ত্বকর্মণি ॥ (গীতা ২.৪৭)
অর্থাৎ স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নাই। কখনো নিজেকে কর্ম ফলের হেতু মনে করো না এবং কখনো স্বধর্মেও আচরন থেকে বিরত হয়ো না।
নিস্কাম কর্মের মাধ্যমে আত্মোৎসর্গীকৃত হওয়া।
“যদি কেউ দর্শনের একটা সূত্রও না পাঠ করে, যদি সে ঈশ্বরের অস্তিত্বেই না বিশ্বাস করে, এবং যদি সারা জীবনে একবারও ঈশ্বরের আরাধনা না করে, তবু শুভ কর্মসমূহের সরলক্ষমতা তাকে সেই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে যেখানে পরের জন্য সে তার জীবন ও অন্য সব কিছুই উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হবে । এক্ষেত্রে একজন ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি তার আরাধনার মাধ্যমে আর একজন দার্শনিক তার জ্ঞানের জন্য যে বিন্দুতে পৌঁছবে সেও সেই বিন্দুতেই পৌঁছতে সক্ষম । সুতরাং তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছ যে দার্শনিক, কর্মী ও ভক্ত সকলে একই বিন্দুতে মিলিত হয়; আর সেই বিন্দুই হচ্ছে আত্মোৎসর্গীকৃত হওয়া।” –স্বামী বিবেকানন্দ, কর্মযোগ, ষষ্ঠ অধ্যায়, প্যারা ৮